মৌমাছিতন্ত্র || Beekeeping ||


 

সকালে চায়ের দোকানের প্রথম কিস্তিটা

গলায় উজার করে একটা সিগারেট ধরিয়ে

তৃপ্তির প্রথম সুখটানটা দিয়ে

পেপার নিয়ে বসেছি চোখ বোলাতে ;

হঠাৎ দেখি দোকানের সামনের

বিশাল কদমগাছটার ডালে লটকে থাকা

মৌমাছির চাক থেকে বেশ কিছু মৌমাছি

পিল পিল করে খসে পড়ে বন বন করে

ঘুরপাক খাচ্ছে আমার চারপাশে।

আমার পাশে বসে থাকা চা খোর গুলি

চায়ের গ্লাস ফ্লাস ফেলে

লাফ মেরে দ্রুত সরে গেল দূরে ;

আমি ভ‍্যাবাচ‍াকা খেয়ে বসে বসেই

পেপারের বাতাস দিয়ে সরাতে চাইলাম হানাদারদের ;

পুরোপুরি সরল না বটে

তবে একটু তফাতে সরে গেল

ঐ চা খোর বন্ধুদের মতই।

না, মৌমাছি গুলি ভদ্রই দেখলাম --

আমায় সোহাগবশত হূলাঘাত করে নি।

পেপার রেখে বেশ কিছুক্ষণ

পর্যবেক্ষণ করছিলাম ওদের গতিবিধি। খানিক পরে দেখলাম --

আবার ওরা ফিরে গেল মৌচাকে ;

বীরপুঙ্গব বন্ধুরা  নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে

একে একে ফিরে এল আমার পাশে।

আমি টিটকিরি করে বললাম --

বাব্বা কি বীরপুরুষ সব!

মৌমাছির ভয়ে তো সব শালাই

ভিনরাজ‍্যে পালিয়ে গেলি চা ফা ফেলে।

এক সবজান্তা বন্ধু খিঁচিয়ে উঠল --

হ‍্যাঁ ভাই, আমরা তো আর

তোমার মত বীরপুরুষ নই!

একবার হূল ফোটালে বুঝবে --

না মরলেও ব‍্যথায়-জ্বরে

বিছানায় লেপ্টে থাকবে দিন সাতেক।

আরেক বন্ধু বেশ চিন্তিতভাবে বলল --

কিন্তু কি হল ব‍্যাপারটা বল তো

ব‍্যাটারা হঠাৎ অমন করে ক্ষেপে গেল কেন ?

কেউ কি খোঁচা মারল না কী ঢিল ছুড়ল!

আমি হেসে বললাম --

ওরে না রে বাবা ওসব কিছু নয়,

কেউ ঢিলও ছোড়ে নি খোঁচাও মারে নি।

ব‍্যাপারটি কি হয়েছে বলি শোন্!

দু তিন বছর ধরেই তো

বেশ কিছু পালের গোদা শ্রমিক মাছি

এই মৌচাক ছেড়ে উড়ে চলে গিয়েছিল

অন‍্য মৌচাকে মক্ষিরাণীর পরামর্শে

কিংবা আরো বেশী সুখের আশায়,

সেখানে খুব বেশী পাত্তা না পেয়ে

তারাই এখন আবার দল বেঁধে ফিরতে চাইছে

পুরানো মৌচাকে,

যেমন গতকাল এমনই এক পালের গোদা

ফিরে এল শিশুশ্রমিক সহ।

মক্ষিরাণী খুশী হলেও

অন‍্য শ্রমিকমাছিরা যারা এতদিন

একনিষ্ঠ ভাবে মধুর যোগান দিয়ে এসেছে,

সযত্নে রক্ষা করে এসেছে মৌচাক --

তারা একটু মনক্ষুন্ন হয়েছে

মক্ষিরাণীর এহেন ক্ষমাপ্রদর্শনে।

তাই বেটাচ্ছেলেরা একটু ক্ষেপে গিয়ে

বেরিয়ে এসেছিল মৌচাক ছেড়ে ;

না রে ভাই বিদ্রোহ নয়, স্রেফ অভিমানেই।

মোটেও চিন্তা করিস না --

সব কটা আবার ফিরে যাবে মৌচাকে।

আরে ভাই, মক্ষিরাণীর বয়স তো কম হল না!

তিনি যা ভাবেন তার হদিশ কি করে পাবে

এই সব ছেলেমানুষ অভিমানীগুলি ?

এরপরে দেখবি --

একে একে সব মৌচাক-ত‍্যাগী

পালের গোদাগুলি প্রায় সব কটাই

ফিরে আসবে এই মৌচাকে এবং

মক্ষিরাণী সাদরে তাদের বরণ করেও নেবেন।

হ‍্যাঁ মাঝেমধ‍্যে এই অভিমানী চ‍্যাংড়াগুলো

একটু আধটু ট‍্যাঁ ফো করবে দিন দুয়েক

তারপর আবার চুপ মেরে যাবে।

ওরে শোন্ ভাই --

এটাই মৌমাছি তন্ত্র আর

এখানে মক্ষিরাণীই শেষ কথা।

যাকে এতক্ষণ ধরে এত জ্ঞান দিলুম

সে ব‍্যাটাচ্ছেলে আমার প‍্যাকেট থেকে

একটা সিগারেট নিয়ে ধরিয়ে

এক রাশ ধোঁয়া উড়িয়ে বলল --

ধুর শালা, তোর জ্ঞানামৃতের রহস‍্য

আমি ঠিক বুঝি উঠতে পারি না।

 

--- প্রশান্ত পাইন

দম্ দম্


 

Comments

Popular posts from this blog

A New Beginning

Internship for Microbiology?

10 Best Microbiology Research Projects for College Students